সরিষার তেল চুলের উপকারিতা

চুলের উপকারিতায় সরিষার তেল: যেসব ভুল করবেন না

চুলের যত্নে নারিকেল তেলের কদর অনেক বেশি। আর আমরা অনেকেই জানি না যে চুলের যত্নে সরিষার তেল কতটা উপকারী। নিয়মিত এই তেল ব্যবহারে চুলের সব সমস্যার থেকে মুক্তি পাবেন।

ত্বক ও চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহৃত করে থাকি। নারিকেল তেলের পাশাপাশি মাঝে মাঝে মাথার তালুতে সরিষার তেল ম্যাসাজ করা খুবই উপকারী।

তবে সরিষার তেল দেয়ার পর চুল ভালো কোনো সুগন্ধযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, যেন তেলের গন্ধ ও ঝাঁজ না থাকে। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার সরিষার তেলে আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুল সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে। এ ছাড়া আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড দারুণ কন্ডিশনারের কাজ করে। ফলে চুল দ্রুত বাড়ে। 

যাইহোক আপনি জেনে আশ্চার্য হবেন আমাদের এই পাক ভারত উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে চুলে সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। এ তেল ব্যবহারে রয়েছে অনেক উপকার। তবে সঠিক নিয়মে এ তেল ব্যবহার করতে হবে, নচেৎ উপকারের তুলনায় অপকার হওয়ার সম্বাভনাও রয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

চুলে সরিষার তেল মাখলে যত উপকার

চুল পড়া বন্ধ করে 
 বর্তমান চুল পড়া খুবই সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অনেক সময় চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। চুলে নিয়মিত সরিষার তেল মালিশ করলে ফলিকল মজবুত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হবে। ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সরিষার তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম মিনারেল এবং ভিটামিন এ ডি ই ও কে। এ ছাড়া থাকে জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন ও সেলেনিয়াম, যা আপনার চুলকে লম্বা হতে সাহায্য করে।

রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুল রুক্ষ, শুষ্ক, নিষ্প্রাণ হয়ে গেলে নিয়মিত মাথার তালুতে সরিষার তেল মালিশ করুন। ফলে মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হবে।

চুল বড় হতে সাহায্য করে

চুল সুন্দর, বড়, মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে সরিষার তেল অত্যন্ত উপকারী বলে প্রমানিত হয়েছে। চুল বড় হতে সাহায্য করে সরিষার তেল। এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান: চুলের খুশকি ও চুলকানি দূর করে 
 সরিষার তেলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় তা চুলের খুশকি ও চুলকানি দূর করে। ফাঙ্গাশে চুলের গোড়া বুজে গিয়ে চুল পাতলা হয়ে যায়। সে সমস্যা সমাধান করে সরিষার তেল। 

কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে

প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে সরিষার তেল দারুণ উপকারী। আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড সরিষার তেলে থাকায় চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়। এছাড়া কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। ফলে চুল দ্রুত বাড়ে ও মজবুত হয়।

চুল সাদা হওয়া রোধ করে

সরিষার তেল ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ এবং বিশেষ করে এতে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। এই বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে। রাতে চুলে সরিষার তেল ম্যাসাজ করে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল কালো হবে।

চুলে যেভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন

১. দই ও সরিষার তেলের মিশ্রণ টকদইয়ের সঙ্গে সরিষার তেল মিশিয়ে মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগান। তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার বা দু’বার প্রায় ব্যবহার করতে পারেন।

২. সরিষার তেল ও অ্যালোভেরার মিশ্রণ একটি পাত্রে সরিষার তেল ও অ্যালোভেরা মেশান। মাথার তালুতে ভালোভাবে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তার পর মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. লেবুর রস ও সরিষার তেলের মিশ্রণ একটি বাটিতে সরিষার তেল, লেবুর রস ও ধনে গুঁড়ো নিয়ে ভালোভাবে মেশান। মাস্ক হিসাবে চুলে নিয়মিত মাখুন। আধাঘণ্টা রেখে মৃদু শ্যাম্পু সহযোগে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুল কন্ডিশন হবে, মজবুত হবে এবং খুশকি দূর হয়ে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

চুলে সরিষার তেল ব্যবহারে যেসব ভুল করা যাবে না

সরিষার তেল ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন। তাহলে বুঝতে পারবেন সরিষার তেল থেকে আপনার ত্বকে কোনো সংক্রমণ হতে পারে কিনা। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে তবেই চুলে সরিষার তেল দিন

অনেকেই দেখা যায় রাতভর তেল মেখে থাকেন। সরিষার তেল সারারাত দিয়ে রাখবেন না। এতে স্ক্যাল্প খুব চিটচিটে হয়ে পড়বে। শ্যাম্পু করার পরও স্ক্যাল্প ভালো পরিষ্কার হবে না। তাই গোসলের আধঘণ্টা আগে চুলে সরিষার তেল মাখলেই যথেষ্ট।

অয়েলি স্ক্যাল্প বা তেলতেলে মাথায় সর্ষের তেল একদমই দেবেন না। তাহলে ত্বকের পোরস আটকে গিয়ে চুলের হাইড্রেশন কমে যেতে পারে।

ঠান্ডা তেল ব্যাবহার থেক বিরত থাকলে ভালো হয়। সরিষার তেল সবসময় গরম করে চুলে দিন। গরম করলে সরিষার তেল অনেক পাতলা ও হালকা হয়ে যায়। ফলে চুল সহজেই সরিষার তেল শোষণ করে নেয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভ করে।

Leave a comment